জীবনের গান

তসলিমা নাসরিন : ১. মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে মহাত্মা কেন বলা হয় আমি জানি না। মহাত্মা মানে মহান আত্মা। প্রথমত আত্মা বলে কিছু নেই। দ্বিতীয়ত আত্মা বলতে যা-ই বোঝানো হয়ে থাকুক, সেটি গান্ধীর বেলায় মহান নয়। তাঁর গুণের কথা আমরা আশি নব্বই বছর ধরে শুনছি। কিন্তু তাঁর দোষের কথা অতটা শুনিনা অথবা মোটেও শুনিনা। তিনি যে বউ পেটাতেন, বেশ্যালয়ে যেতেন, সতেরো-আঠারো বছর বয়সী মেয়েদের ন্যাংটো করিয়ে, নিজেও ন্যাংটো হয়ে এক বিছানায় ঘুমোতেন- একদিন দুদিন নয়, বছরের পর বছর – তাঁর এসব দোষ জেনেবুঝেই আড়াল করা হয়। মনুবেন তাঁর ডায়রিতে লিখেছেন কীভাবে তাঁকে ন্যাংটো করানো হতো যখন তিনি ন্যাংটো গান্ধীকে বাথটাবে স্নান করাতেন। কচি কচি উলঙ্গ মেয়ের সঙ্গে রাত কাটিয়ে কী নাকি ব্রহ্মচর্য পরীক্ষা করতেন গান্ধী। নিজের নাতনিকেও ছাড়েননি। গান্ধীর মৃত্যুর পর কংগ্রেস নেতারা নিরুদ্দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মনুবেন আর আভাবেনকে, জীবনের শেষ দিনেও ক্রাচ হিসেবে গান্ধী যাঁদের ব্যবহার করেছেন। এই মেয়েগুলো চরম হতাশার মধ্যে তাঁদের বাকি জীবন কাটিয়েছেন। কেউই আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেননি।

 

তবে কলকাতার এক পুজোয় গান্ধীকে যে অসুরের জায়গায় বসানো হয়েছে, সেটি অত্যন্ত অনুচিত। গান্ধীর যৌনবিকৃতি থাকতে পারে, তিনি ভুল করতে পারেন হিটলারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য চার্চিলকে অনুরোধ করে, ভুল করতে পারেন অহিংসার নীতিতে বিশ্বাস করে দূরদৃষ্টিহীনের মতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে, তিনি ভুল করতে পারেন হিটলারের অত্যাচার সহ্য করার জন্য ইহুদিদের পরামর্শ দিয়ে, কিন্তু তিনি ভারতবর্ষের টুকরো হওয়া চাননি, দেশকে ঔপনিবেশিক শাসকদের অধীনে রাখতে তিনি চাননি- এসবের জন্য তিনি যে আন্দোলন করেছিলেন, তা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ভারতবর্ষের এবং হিন্দুর শত্রু নন যে তাঁকে অসুর বলে চিহ্নিত করতে হবে। গান্ধীকে এখনও ‘জাতির পিতা’ হিসেবে অধিকাংশ ভারতীয়ই সম্মান করে।

 

২. আজ দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের দিন। [এ লেখা যখন লিখছি] আজ মেয়েরা সিঁদুর খেলবে। সিঁদুর খেলা মানে সধবা মেয়েরা এক অপরের মুখে মাথায় সিঁদুর লেপে দেবে। এত ঘটা করে সাধারণ এমনকী অসাধারণ মেয়েরাও সিঁদুর খেলে কেন? ‘সিঁদুর খেলা’ কি নিতান্তই পুরুষতান্ত্রিক নয়? সধবাকে সিঁদুর পরতে হয় যেন স্বামী দীর্ঘজীবন লাভ করে। স্ত্রীর দীর্ঘজীবন কামনা করে পুরুষেরা তাদের সিঁথিতে সিঁদুর পরে না তো! নারীবিরোধী কুসংস্কারকে বরণ করে নারীরা নিজেদের কি আরও নিচে নামাচ্ছে না? নারীকে পুরুষের সম্পত্তি ভাবার যে ‘সংস্কৃতি’ প্রচলিত, তার আজও কি বিলুপ্তির প্রয়োজন নেই? সতীদাহ তো গেল। কোথায় করবা চৌথ, সিঁদুর খেলাও যাবে, তা নয়, মহাসমারোহে এসব পালন করা হচ্ছে! নারীদের দিয়ে এসব পালন করানোর ষড়যন্ত্রটা নারীবিদ্বেষী পুরুষেরা করছে না তো?

 

জানি অনেকে বলবে এই সিঁদুর খেলা শুধু আনন্দের জন্য খেলা। এই খেলার সঙ্গে ধর্মের বা স্বামীর দীর্ঘায়ুর কোনও সম্পর্ক নেই। তাই কী? তবে আনন্দটা কি অন্য কোনও রঙ দিয়ে করা যায় না? সিঁদুরের প্রয়োজন কেন? সিঁদুরের তো একটা অর্থ আছে, আছে বলেই বিধবা মেয়েদের সিঁদুর থেকে সরিয়ে রাখা হয়। সিঁদুর খেলা যদি নিতান্তই আনন্দের জন্য হয়ে থাকে, পুরুষ কেন সিঁদুর খেলে না? তাদের কি আনন্দ করতে ইচ্ছে করে না?

 

জামাই ষষ্ঠীতে জামাই খাওয়াও। ভাই ফোঁটায় ভাইকে ফোঁটা দাও। রাখি উৎসবে ভাইয়ের হাতে রাখি বাঁধো। তোমার জন্য কী? তোমার জন্য সতীদাহ। তোমার জন্য সিঁদুর খেলা। তোমার জন্য করবা চৌথ। তোমার জন্য শিবরাত্রি। তোমার জন্য যা কিছু, তা আসলে তোমার জন্য নয়, সবই পুরুষের জন্য, পুরুষের মঙ্গলের জন্য। কী বললে, সতীদাহ এখন আর নেই? আপাতদৃষ্টিতে নেই বটে। তবে আছে, আগুনটা দেখতে চাও না বলে দেখছো না।

 

৩. ১৭ বছর বয়সী নিকা শাকারামিকে গুম করে মৃত অবস্থায় ফেরত দিয়েছে সরকারী বাহিনী। নিকার নাক থেতলে ছিল, মাথার খুলি কয়েক টুকরোয় ভাঙা ছিল। কত যে নির্যাতন চালিয়েছিল নিকার ওপর! কী দোষ ছিল নিকার? নিকা হিজাব পরেনি, নিকা হিজাব বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। হিজাব বিরোধী আন্দোলনের প্রায় ১০০ জনকে খুন করছে সরকারী বাহিনী।

 

ইরানের স্কুলছাত্রীরা এখন হিজাব খুলে ফেলে সরকারের বাধ্যতামূলক হিজাব নীতির প্রতিবাদ করছে।

 

ইরানের এই হিজাব বিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়নি অন্যান্য মুসলিম দেশ। ইরান এবং আফগানিস্তান ছাড়া অন্য কোনও দেশে হিজাব বাধ্যতামূলক নয়। সৌদি আরবও উদার নীতির দিকে হাঁটছে। অধিকাংশ মুসলিম দেশে হিজাব এখনও ‘চয়েজ’। যে সেক্যুলার দেশগুলো নিরাপত্তার খাতিরে নিকাব পরে মুখ আড়াল করার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে, সেসব দেশে হিজাব-নিকাব-বোরখা পরার অধিকারের জন্য মুসলমানেরা লড়ছে। এরাই কিন্তু ইরানের মেয়েদের মতো হিজাব বিরোধী আন্দোলন করবে, যদি হিজাব না পরার দায়ে তাদের এক এক করে নির্যাতনের শিকার হতে হয় অথবা মরতে হয়।

 

৪. আমি কাঁদলে লোকে বলে, কাঁদা নাকি আমাকে মানায় না। কেন মানায় না? আমি স্ট্রং, তাই। স্ট্রং হলে দুঃখে কষ্টে কাঁদতে নেই, এই ধারণা থেকেই মানুষ পুরুষলোক কাঁদছে এই দৃশ্য দেখতে চায় না। ছিঃ ছিঃ, পুরুষ হয়ে মেয়েদের মতো কাঁদছে কেন! স্ট্রং মেয়েরা, জীবনে যা কিছুই ঘটুক, কাঁদবে না। কাঁদলে তাকে আর স্ট্রং মনে হয় না। আর পুরুষ মাত্রই, যেহেতু বিশ্বাস করা হয়, সবাই স্ট্রং। তাই কোনও পুরুষ কাঁদলে তাকে আর ‘পুরুষ’ বলে মনে হয় না। কাঁদাটা কাদের জন্য? নরম কোমল সেন্সিটিভ মেয়েদের জন্য।

 

দুঃখে কষ্টে যন্ত্রণায় বেদনায় কোমল এবং কঠিন মানুষ কাঁদে, লিঙ্গ নির্বিশেষে কাঁদে, কাঁদাটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের সমাজে ছোটবেলা থেকেই ছেলেরা না কাঁদতে শেখে। বাবা মারা শেখায়। ছেলে হয়ে জন্ম নিলে নাকি কাঁদতে হয় না।

 

যারা কাঁদে না, তাদের আমার খুব ভয়ংকর মানুষ বলে মনে হয়। আবেগ কি পুরুষের নেই? নিশ্চয়ই আছে। যে আবেগ থেকে রাগ ঘৃণা প্রতিশোধস্পৃহা, হাসি খুশি আনন্দ ইত্যাদি উৎকট ভাবে প্রকাশিত হয়, সে আবেগ থেকেই তো মানবিক ক্রন্দন উঠে আসার কথা।

 

অন্যের জন্য কাঁদার মতো সুন্দর কী আছে জগতে! মুসলমানেরা দেখলাম কাঁদার বিরুদ্ধে। আমার মা যখন মারা গেল, লক্ষ্য করলাম, যারা মা’কে হারিয়ে চিৎকার করে কাঁদছিল, তাদের থামিয়ে দিল কিছু সাচ্চা মুসলমান। তাদের ভাষ্য, ‘আল্লাহর বান্দাকে আল্লাহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন, আল্লাহ এখন নিয়ে যাচ্ছেন। শব্দ করে কাঁদলে আল্লাহ নারাজ হবেন, যদি নিতান্তই কাঁদতে হয়, নীরবে কিছুটা চোখের জল ফেলো, ব্যস’।

 

ধর্মের নামে, পুরুষতন্ত্রের নামে, মানুষের ভালোবাসা আর আবেগের মতো গুণগুলোকে বিদেয় করার চেষ্টা চলছে, মানুষকে পাথর বানাবার চেষ্টা চলছে। যে যত পাথর সে তত পুরুষ সে তত স্ট্রং! যুক্তিবাদিদের কাঁদতে নেই কে বললো! আবেগে কাঁদার পর মানুষের ব্যথা বেদনা কম হয়, টেনশান কমে, মন ভালো হয়, চোখের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। যুক্তিবাদিরা এই বেনেফিটটা বোকার মতো হারাবে কেন?

 

আমি যখন মা’কে নিয়ে আমার ‘নেই কিছু নেই’ বইটি লিখছিলাম, লেখার সময় আমি প্রতিদিন মা’র জন্য কাঁদতাম, মা’র না থাকার কষ্টে কাঁদতাম। বইটি লেখার পর আমার কী যে ভালো লেগেছে তা বোঝাতে পারবো না। কান্না আমাকে সেই ভালো লাগা, সেই প্রশান্তি দিয়েছে।

 

৫. বাংলাদেশের লোকেরা রোকেয়াকে মাথায় তুলে নাচেন আর একই রকম সত্য উচ্চারণের জন্য আমাকে পায়ের তলায় পিষে মারেন। কারণটি কী?

 

১. রোকেয়া ঘোমটা পরতেন, পর্দা করতেন। স্বামী পঙ্গু হলেও স্বামীকে ত্যাগ করেননি। আমি ঘোমটা পরি না, পর্দা করি না। স্বামী পঙ্গু না হলেও স্বামীকে ত্যাগ করেছি।

 

২. রোকেয়া মুসলিম মেয়েদের জন্য ইস্কুল খুলেছিলেন স্বামীর টাকায় স্বামীর পরামর্শে, স্বামী তাঁর লেখা পত্র পত্রিকায় ছাপানোর জন্য পাঠাতেন, লেখার জন্য প্রেরণা দিতেন। স্বামীর অধীনে থেকে নিজের স্বাধীন মত প্রকাশ করতেন রোকেয়া। আমি স্বনির্ভর, কারো অধীনে থাকি না, নিজের মত সে যত ভিন্নই হোক অন্যদের মতের চেয়ে, নির্দ্বিধায় প্রকাশ করি। শুধু মুসলিম মেয়ে নয়, ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে আমি জগতের সকল মেয়ের সমানাধিকারের জন্য সরব হয়েছি। স্বামী জাতীয় কিছু আমাকে নিরাপত্তা দেয় না। কোনও পুরুষের পরামর্শে চলি না, আমার একার সিদ্ধান্তে একার চলাকে লোকে ঔদ্ধত্য বলে বিবেচনা করে।

 

৩. ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে রোকেয়া লিখলেও রোকেয়ার বিরুদ্ধে ফতোয়া দেওয়া হয়নি, তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়নি। কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেনি, তাঁর বই নিষিদ্ধ করেনি কোনও সরকার। তাঁকে কোনও দেশ ব্রাত্য করেনি, নির্বাসনে যেতে বাধ্য করেনি। তাঁর দেশে-প্রবেশের দ্বার চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেয়নি।

সবই আমার বিরুদ্ধে হয়েছে, তাই বাংলাদেশের মুসলমানেরা আমাকে সগৌরবে চরম অসম্মান করা জায়েজ মনে করে।

৪. রোকেয়া পুরুষ-বন্ধুদের নিয়ে ক্যাফেতে আড্ডা দিতেন না, আমি পুরুষ-বন্ধুদের নিয়ে ক্যাফেতে আড্ডা দিই।

৫. রোকেয়াকে যেহেতু দেশের সরকার সম্মান করে, তাই রোকেয়াকে সম্মান করা পলিটিক্যালি কারেক্ট। আমাকে যেহেতু দেশের সরকার অপমান করে, তাই আমাকে অপমান করাটা পলিটিক্যালি কারেক্ট।

৬. আমি যদি “সুলতানার স্বপ্ন’’ গল্পটি লিখতাম, যেখানে নারীরা প্রভু আর পুরুষেরা চাকরবাকর, “পুরুষবিদ্বেষী” বলে গালি দিতে দিতে আমাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলতো উগ্র পুরুষেরা, কিন্তু রোকেয়া লিখেছেন বলে রোকেয়া “সুস্থ সুন্দর নারীবাদী”। কারণ প্রভাবশালী মহল রোকেয়াকে গ্রহণ করেছে, আমাকে করেনি।

৭. রোকেয়া লিখেছিলেন, “আমাদিগকে অন্ধকারে রাখবার জন্য পুরুষগণ ঐ ধর্মগ্রন্থগুলোকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন”। তিনি যদিও মনে করতেন কোরান পুরুষের লেখা কিন্তু কখনও বলেননি বা লেখেননি যে তিনি নাস্তিক। আমি শতবার বলেছি এবং লিখেছি যে আমি নাস্তিক। ৮. পুরুষতন্ত্রের তীব্র সমালোচনা করতেন রোকেয়া কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক নিয়ম মেনে চলতেন। আমি পুরুষতন্ত্রের তীব্র সমালোচনা করি এবং পুরুষতান্ত্রিক নিয়ম মেনে চলি না।

৯. রোকেয়া মৃত, আমি জীবিত। নারীবিদ্বেষী সমাজ মৃত নারীবাদীদের ভয় পায় না, তাদের মেনে নেয়। কিন্তু জীবিত নারীবাদীদের ভয় পায়, তাদের সহ্য করে না।

১০. আমার লেখা পড়ে নারীবাদ সম্পর্কে জেনে, অনুকরণ করে লিখে, রোকেয়ার কোনও বই না পড়েই রোকেয়াকে ‘মহান নারীবাদী’ বলা আর আমাকে ‘নর্দমার কীট’ বলাটা নর্ম। নর্ম মেনে চললে গালি খেতে হয় না, একঘরে হতে হয় না।

লেখক : নির্বাসিত লেখিকা্। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» শপথ নিলেন নতুন সিইসি ও ৪ নির্বাচন কমিশনার

» দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান ফারুকের

» সেনাবাহিনীর অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

» যেসব এলাকায় আজ রাত ৮টা পর্যন্ত গ্যাস থাকবে না

» অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশি উইমেনস চেম্বার অফ কমার্সের আয়োজন এলান গালা এন্ড চ্যারিটি ইভিনিং অনুষ্ঠিত

» ট্রাক চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত,আহত ২

» পাইরেসির শিকার শাকিব খানের ‘দরদ’

» এশিয়া কাপ জয়ের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ল বাংলাদেশ দল

» পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি

» মিনা ফারাহকে ফোন করলেন জামায়াত আমির

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

জীবনের গান

তসলিমা নাসরিন : ১. মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে মহাত্মা কেন বলা হয় আমি জানি না। মহাত্মা মানে মহান আত্মা। প্রথমত আত্মা বলে কিছু নেই। দ্বিতীয়ত আত্মা বলতে যা-ই বোঝানো হয়ে থাকুক, সেটি গান্ধীর বেলায় মহান নয়। তাঁর গুণের কথা আমরা আশি নব্বই বছর ধরে শুনছি। কিন্তু তাঁর দোষের কথা অতটা শুনিনা অথবা মোটেও শুনিনা। তিনি যে বউ পেটাতেন, বেশ্যালয়ে যেতেন, সতেরো-আঠারো বছর বয়সী মেয়েদের ন্যাংটো করিয়ে, নিজেও ন্যাংটো হয়ে এক বিছানায় ঘুমোতেন- একদিন দুদিন নয়, বছরের পর বছর – তাঁর এসব দোষ জেনেবুঝেই আড়াল করা হয়। মনুবেন তাঁর ডায়রিতে লিখেছেন কীভাবে তাঁকে ন্যাংটো করানো হতো যখন তিনি ন্যাংটো গান্ধীকে বাথটাবে স্নান করাতেন। কচি কচি উলঙ্গ মেয়ের সঙ্গে রাত কাটিয়ে কী নাকি ব্রহ্মচর্য পরীক্ষা করতেন গান্ধী। নিজের নাতনিকেও ছাড়েননি। গান্ধীর মৃত্যুর পর কংগ্রেস নেতারা নিরুদ্দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মনুবেন আর আভাবেনকে, জীবনের শেষ দিনেও ক্রাচ হিসেবে গান্ধী যাঁদের ব্যবহার করেছেন। এই মেয়েগুলো চরম হতাশার মধ্যে তাঁদের বাকি জীবন কাটিয়েছেন। কেউই আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেননি।

 

তবে কলকাতার এক পুজোয় গান্ধীকে যে অসুরের জায়গায় বসানো হয়েছে, সেটি অত্যন্ত অনুচিত। গান্ধীর যৌনবিকৃতি থাকতে পারে, তিনি ভুল করতে পারেন হিটলারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য চার্চিলকে অনুরোধ করে, ভুল করতে পারেন অহিংসার নীতিতে বিশ্বাস করে দূরদৃষ্টিহীনের মতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে, তিনি ভুল করতে পারেন হিটলারের অত্যাচার সহ্য করার জন্য ইহুদিদের পরামর্শ দিয়ে, কিন্তু তিনি ভারতবর্ষের টুকরো হওয়া চাননি, দেশকে ঔপনিবেশিক শাসকদের অধীনে রাখতে তিনি চাননি- এসবের জন্য তিনি যে আন্দোলন করেছিলেন, তা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ভারতবর্ষের এবং হিন্দুর শত্রু নন যে তাঁকে অসুর বলে চিহ্নিত করতে হবে। গান্ধীকে এখনও ‘জাতির পিতা’ হিসেবে অধিকাংশ ভারতীয়ই সম্মান করে।

 

২. আজ দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের দিন। [এ লেখা যখন লিখছি] আজ মেয়েরা সিঁদুর খেলবে। সিঁদুর খেলা মানে সধবা মেয়েরা এক অপরের মুখে মাথায় সিঁদুর লেপে দেবে। এত ঘটা করে সাধারণ এমনকী অসাধারণ মেয়েরাও সিঁদুর খেলে কেন? ‘সিঁদুর খেলা’ কি নিতান্তই পুরুষতান্ত্রিক নয়? সধবাকে সিঁদুর পরতে হয় যেন স্বামী দীর্ঘজীবন লাভ করে। স্ত্রীর দীর্ঘজীবন কামনা করে পুরুষেরা তাদের সিঁথিতে সিঁদুর পরে না তো! নারীবিরোধী কুসংস্কারকে বরণ করে নারীরা নিজেদের কি আরও নিচে নামাচ্ছে না? নারীকে পুরুষের সম্পত্তি ভাবার যে ‘সংস্কৃতি’ প্রচলিত, তার আজও কি বিলুপ্তির প্রয়োজন নেই? সতীদাহ তো গেল। কোথায় করবা চৌথ, সিঁদুর খেলাও যাবে, তা নয়, মহাসমারোহে এসব পালন করা হচ্ছে! নারীদের দিয়ে এসব পালন করানোর ষড়যন্ত্রটা নারীবিদ্বেষী পুরুষেরা করছে না তো?

 

জানি অনেকে বলবে এই সিঁদুর খেলা শুধু আনন্দের জন্য খেলা। এই খেলার সঙ্গে ধর্মের বা স্বামীর দীর্ঘায়ুর কোনও সম্পর্ক নেই। তাই কী? তবে আনন্দটা কি অন্য কোনও রঙ দিয়ে করা যায় না? সিঁদুরের প্রয়োজন কেন? সিঁদুরের তো একটা অর্থ আছে, আছে বলেই বিধবা মেয়েদের সিঁদুর থেকে সরিয়ে রাখা হয়। সিঁদুর খেলা যদি নিতান্তই আনন্দের জন্য হয়ে থাকে, পুরুষ কেন সিঁদুর খেলে না? তাদের কি আনন্দ করতে ইচ্ছে করে না?

 

জামাই ষষ্ঠীতে জামাই খাওয়াও। ভাই ফোঁটায় ভাইকে ফোঁটা দাও। রাখি উৎসবে ভাইয়ের হাতে রাখি বাঁধো। তোমার জন্য কী? তোমার জন্য সতীদাহ। তোমার জন্য সিঁদুর খেলা। তোমার জন্য করবা চৌথ। তোমার জন্য শিবরাত্রি। তোমার জন্য যা কিছু, তা আসলে তোমার জন্য নয়, সবই পুরুষের জন্য, পুরুষের মঙ্গলের জন্য। কী বললে, সতীদাহ এখন আর নেই? আপাতদৃষ্টিতে নেই বটে। তবে আছে, আগুনটা দেখতে চাও না বলে দেখছো না।

 

৩. ১৭ বছর বয়সী নিকা শাকারামিকে গুম করে মৃত অবস্থায় ফেরত দিয়েছে সরকারী বাহিনী। নিকার নাক থেতলে ছিল, মাথার খুলি কয়েক টুকরোয় ভাঙা ছিল। কত যে নির্যাতন চালিয়েছিল নিকার ওপর! কী দোষ ছিল নিকার? নিকা হিজাব পরেনি, নিকা হিজাব বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। হিজাব বিরোধী আন্দোলনের প্রায় ১০০ জনকে খুন করছে সরকারী বাহিনী।

 

ইরানের স্কুলছাত্রীরা এখন হিজাব খুলে ফেলে সরকারের বাধ্যতামূলক হিজাব নীতির প্রতিবাদ করছে।

 

ইরানের এই হিজাব বিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়নি অন্যান্য মুসলিম দেশ। ইরান এবং আফগানিস্তান ছাড়া অন্য কোনও দেশে হিজাব বাধ্যতামূলক নয়। সৌদি আরবও উদার নীতির দিকে হাঁটছে। অধিকাংশ মুসলিম দেশে হিজাব এখনও ‘চয়েজ’। যে সেক্যুলার দেশগুলো নিরাপত্তার খাতিরে নিকাব পরে মুখ আড়াল করার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে, সেসব দেশে হিজাব-নিকাব-বোরখা পরার অধিকারের জন্য মুসলমানেরা লড়ছে। এরাই কিন্তু ইরানের মেয়েদের মতো হিজাব বিরোধী আন্দোলন করবে, যদি হিজাব না পরার দায়ে তাদের এক এক করে নির্যাতনের শিকার হতে হয় অথবা মরতে হয়।

 

৪. আমি কাঁদলে লোকে বলে, কাঁদা নাকি আমাকে মানায় না। কেন মানায় না? আমি স্ট্রং, তাই। স্ট্রং হলে দুঃখে কষ্টে কাঁদতে নেই, এই ধারণা থেকেই মানুষ পুরুষলোক কাঁদছে এই দৃশ্য দেখতে চায় না। ছিঃ ছিঃ, পুরুষ হয়ে মেয়েদের মতো কাঁদছে কেন! স্ট্রং মেয়েরা, জীবনে যা কিছুই ঘটুক, কাঁদবে না। কাঁদলে তাকে আর স্ট্রং মনে হয় না। আর পুরুষ মাত্রই, যেহেতু বিশ্বাস করা হয়, সবাই স্ট্রং। তাই কোনও পুরুষ কাঁদলে তাকে আর ‘পুরুষ’ বলে মনে হয় না। কাঁদাটা কাদের জন্য? নরম কোমল সেন্সিটিভ মেয়েদের জন্য।

 

দুঃখে কষ্টে যন্ত্রণায় বেদনায় কোমল এবং কঠিন মানুষ কাঁদে, লিঙ্গ নির্বিশেষে কাঁদে, কাঁদাটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের সমাজে ছোটবেলা থেকেই ছেলেরা না কাঁদতে শেখে। বাবা মারা শেখায়। ছেলে হয়ে জন্ম নিলে নাকি কাঁদতে হয় না।

 

যারা কাঁদে না, তাদের আমার খুব ভয়ংকর মানুষ বলে মনে হয়। আবেগ কি পুরুষের নেই? নিশ্চয়ই আছে। যে আবেগ থেকে রাগ ঘৃণা প্রতিশোধস্পৃহা, হাসি খুশি আনন্দ ইত্যাদি উৎকট ভাবে প্রকাশিত হয়, সে আবেগ থেকেই তো মানবিক ক্রন্দন উঠে আসার কথা।

 

অন্যের জন্য কাঁদার মতো সুন্দর কী আছে জগতে! মুসলমানেরা দেখলাম কাঁদার বিরুদ্ধে। আমার মা যখন মারা গেল, লক্ষ্য করলাম, যারা মা’কে হারিয়ে চিৎকার করে কাঁদছিল, তাদের থামিয়ে দিল কিছু সাচ্চা মুসলমান। তাদের ভাষ্য, ‘আল্লাহর বান্দাকে আল্লাহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন, আল্লাহ এখন নিয়ে যাচ্ছেন। শব্দ করে কাঁদলে আল্লাহ নারাজ হবেন, যদি নিতান্তই কাঁদতে হয়, নীরবে কিছুটা চোখের জল ফেলো, ব্যস’।

 

ধর্মের নামে, পুরুষতন্ত্রের নামে, মানুষের ভালোবাসা আর আবেগের মতো গুণগুলোকে বিদেয় করার চেষ্টা চলছে, মানুষকে পাথর বানাবার চেষ্টা চলছে। যে যত পাথর সে তত পুরুষ সে তত স্ট্রং! যুক্তিবাদিদের কাঁদতে নেই কে বললো! আবেগে কাঁদার পর মানুষের ব্যথা বেদনা কম হয়, টেনশান কমে, মন ভালো হয়, চোখের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। যুক্তিবাদিরা এই বেনেফিটটা বোকার মতো হারাবে কেন?

 

আমি যখন মা’কে নিয়ে আমার ‘নেই কিছু নেই’ বইটি লিখছিলাম, লেখার সময় আমি প্রতিদিন মা’র জন্য কাঁদতাম, মা’র না থাকার কষ্টে কাঁদতাম। বইটি লেখার পর আমার কী যে ভালো লেগেছে তা বোঝাতে পারবো না। কান্না আমাকে সেই ভালো লাগা, সেই প্রশান্তি দিয়েছে।

 

৫. বাংলাদেশের লোকেরা রোকেয়াকে মাথায় তুলে নাচেন আর একই রকম সত্য উচ্চারণের জন্য আমাকে পায়ের তলায় পিষে মারেন। কারণটি কী?

 

১. রোকেয়া ঘোমটা পরতেন, পর্দা করতেন। স্বামী পঙ্গু হলেও স্বামীকে ত্যাগ করেননি। আমি ঘোমটা পরি না, পর্দা করি না। স্বামী পঙ্গু না হলেও স্বামীকে ত্যাগ করেছি।

 

২. রোকেয়া মুসলিম মেয়েদের জন্য ইস্কুল খুলেছিলেন স্বামীর টাকায় স্বামীর পরামর্শে, স্বামী তাঁর লেখা পত্র পত্রিকায় ছাপানোর জন্য পাঠাতেন, লেখার জন্য প্রেরণা দিতেন। স্বামীর অধীনে থেকে নিজের স্বাধীন মত প্রকাশ করতেন রোকেয়া। আমি স্বনির্ভর, কারো অধীনে থাকি না, নিজের মত সে যত ভিন্নই হোক অন্যদের মতের চেয়ে, নির্দ্বিধায় প্রকাশ করি। শুধু মুসলিম মেয়ে নয়, ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে আমি জগতের সকল মেয়ের সমানাধিকারের জন্য সরব হয়েছি। স্বামী জাতীয় কিছু আমাকে নিরাপত্তা দেয় না। কোনও পুরুষের পরামর্শে চলি না, আমার একার সিদ্ধান্তে একার চলাকে লোকে ঔদ্ধত্য বলে বিবেচনা করে।

 

৩. ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে রোকেয়া লিখলেও রোকেয়ার বিরুদ্ধে ফতোয়া দেওয়া হয়নি, তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়নি। কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেনি, তাঁর বই নিষিদ্ধ করেনি কোনও সরকার। তাঁকে কোনও দেশ ব্রাত্য করেনি, নির্বাসনে যেতে বাধ্য করেনি। তাঁর দেশে-প্রবেশের দ্বার চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেয়নি।

সবই আমার বিরুদ্ধে হয়েছে, তাই বাংলাদেশের মুসলমানেরা আমাকে সগৌরবে চরম অসম্মান করা জায়েজ মনে করে।

৪. রোকেয়া পুরুষ-বন্ধুদের নিয়ে ক্যাফেতে আড্ডা দিতেন না, আমি পুরুষ-বন্ধুদের নিয়ে ক্যাফেতে আড্ডা দিই।

৫. রোকেয়াকে যেহেতু দেশের সরকার সম্মান করে, তাই রোকেয়াকে সম্মান করা পলিটিক্যালি কারেক্ট। আমাকে যেহেতু দেশের সরকার অপমান করে, তাই আমাকে অপমান করাটা পলিটিক্যালি কারেক্ট।

৬. আমি যদি “সুলতানার স্বপ্ন’’ গল্পটি লিখতাম, যেখানে নারীরা প্রভু আর পুরুষেরা চাকরবাকর, “পুরুষবিদ্বেষী” বলে গালি দিতে দিতে আমাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলতো উগ্র পুরুষেরা, কিন্তু রোকেয়া লিখেছেন বলে রোকেয়া “সুস্থ সুন্দর নারীবাদী”। কারণ প্রভাবশালী মহল রোকেয়াকে গ্রহণ করেছে, আমাকে করেনি।

৭. রোকেয়া লিখেছিলেন, “আমাদিগকে অন্ধকারে রাখবার জন্য পুরুষগণ ঐ ধর্মগ্রন্থগুলোকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন”। তিনি যদিও মনে করতেন কোরান পুরুষের লেখা কিন্তু কখনও বলেননি বা লেখেননি যে তিনি নাস্তিক। আমি শতবার বলেছি এবং লিখেছি যে আমি নাস্তিক। ৮. পুরুষতন্ত্রের তীব্র সমালোচনা করতেন রোকেয়া কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক নিয়ম মেনে চলতেন। আমি পুরুষতন্ত্রের তীব্র সমালোচনা করি এবং পুরুষতান্ত্রিক নিয়ম মেনে চলি না।

৯. রোকেয়া মৃত, আমি জীবিত। নারীবিদ্বেষী সমাজ মৃত নারীবাদীদের ভয় পায় না, তাদের মেনে নেয়। কিন্তু জীবিত নারীবাদীদের ভয় পায়, তাদের সহ্য করে না।

১০. আমার লেখা পড়ে নারীবাদ সম্পর্কে জেনে, অনুকরণ করে লিখে, রোকেয়ার কোনও বই না পড়েই রোকেয়াকে ‘মহান নারীবাদী’ বলা আর আমাকে ‘নর্দমার কীট’ বলাটা নর্ম। নর্ম মেনে চললে গালি খেতে হয় না, একঘরে হতে হয় না।

লেখক : নির্বাসিত লেখিকা্। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com